হাড় ক্ষয়ে যেসব ঝুঁকি সৃষ্টি হয় শরীরে, করণীয়

ফানাম নিউজ
  ১২ জানুয়ারি ২০২২, ১৪:০৯

অস্টিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয় বলতে শরীরে হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়াকে বুঝায়।  অস্টিওপরোটিক হাড় অনেকটা মৌচাকের মতো হয়ে যায়। এতে হাড় ঝাঁজরা বা ফুলকো হয়ে যায় বা এতে হাড় অতি দ্রুত ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।  মারাত্মক হাড় ক্ষয়ে হাঁচি বা কাশি দিলেও হাড় ভেঙে যেতে পারে।

পঞ্চাশ বছরের পর থেকে শরীরে হাড় ক্ষয় বা এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে।  হাড় ক্ষয়ের শুরু কিন্তু অনেক আগে থেকেই হতে থাকে।  পুরুষ বা নারীর দেহের হাড় সাধারণত ২৮ বছর বয়স পর্যন্ত ঘনত্বে বাড়ে; ৩৪ বছর পর্যন্ত তা বজায় থাকে।  এরপর থেকে হাড় ক্ষয় হতে থাকে।

মানবশরীরে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি ও করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. শাহজাদা সেলিম। 
 
যাদের হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বেশি তাদের হাড়ের ঘনত্ব দ্রুত কমতে থাকে।  নারীদের মাসিক পরবর্তী সময়ে হাড় ক্ষয়ের গতি বাড়ে। এ ছাড়াও অনেক কারণ বা ঝুঁকি হাড় ক্ষয়ের আশঙ্কা বৃদ্ধি করতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩০% রজঃনিবৃত মহিলা হাড় ক্ষয়ে আক্রান্ত।  ইউরোপের চিত্রও অনেকটা তেমনই।  অন্ততপক্ষে ৪০% নারী ও ১৫%-৩০% পুরুষ তাদের জীবদ্দশার বাকি সময়ে স্বল্প আঘাতে হাড় ভাঙার শিকার হন যা হাড় ক্ষয়ের কারণেই হয়ে থাকে। 

যাদের একবার হাড় ভাঙার ঘটনা ঘটে তাদের পরবর্তীতে হাড় ভাঙার ঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে যায়।  একবার পাঁজরের হাড় ভাঙলে কোমরের হাড় ভাঙার আশঙ্কা ২-৩ গুণ বৃদ্ধি পায় এবং উরুর হাড় ভাঙার আশঙ্কা ১-৪ বাড়ে।

হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি (অসংশোধনযোগ্য ঝুঁকি)

* বয়োবৃদ্ধি

* স্ত্রী লিঙ্গ

* জিনগত ত্রুটি

* অপারেশনের কারণে ডিম্বাশয় না থাকা

* হায়পোগোনাডিজম (পুরুষ ও মহিলার)

* অতি খর্বাকৃতি

সংশোধনযোগ্য ঝুঁকি

* ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি

* ধূমপান

* অপুষ্টি (ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন এ, কে ইত্যাদি)

* ক্ষীনকায় দৈহিক আকার

* আমিষনির্ভর খাদ্যাভ্যাস

* বেশি বয়সে অতিরিক্ত চা/কফি/ চকোলেট গ্রহণের অভ্যাস।

* খাদ্যে বা বাতাসে ভারি ধাতু

* কোমল পানীয় ও মদ্যপান

মেডিকেল ঝুঁকি

* দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা

* স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন (বাংলাদেশের রোগীদের মাঝে এটি খুব ব্যাপক; বিশেষ করে অস্বীকৃত/আস্বীকৃতদের দ্বারা নির্দেশিত হয়ে যারা ওষুধ সেবন করছেন, প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির (কবিরাজি, আয়ুর্বেদী, হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ইত্যাদি) মাঝে স্টেরয়েডের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি]

* অন্যান্য হরমোনজনিত রোগ : হাইপার-থাইরয়ডিজম, হাইপার-প্যারাথাইরয়িডিজম, কুসিং সিনড্রম, ডায়াবেটিস, এক্রমেগালি, অ্যাডিসন রোগ, রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস, এসএলই, কিডনি অকার্যকারিতা ইত্যাদি।

উপসর্গ : প্রথমত কোনো শারীরিক লক্ষণ নাও থাকতে পারে। তবে কোমরে বা পিঠে বা অন্য কোথাও ব্যথা, বিশেষ করে ব্যথানাশক ওষুধেও তা কমছে না, এমন চরিত্রের। কারও কারও দৈহিক উচ্চতা কম থাকবে, কুঁজো হয়ে যাওয়া বা সামনে ঝুঁকে থাকা। সংগোপনে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাপার হল, মেরুদণ্ডে ফাটল বা চিড় ধরা এবং ঠুনকো আঘাতেই হাড় ভাঙা।

শনাক্তকরণ : অনেক রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার হতে পারে : কিছু ঘনত্ব পরিমাপের জন্য, কিছু আবার ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করার জন্য। বিএমডি পরীক্ষাটি এ কাজে সবচেয়ে ভালো।

চিকিৎসা : এ রোগে প্রধান ও প্রথম পদক্ষেপ হবে ঝুঁকি শনাক্তকরণ, সম্ভব হলে তা রহিত করা। এরপর বেশ কিছু ওষুধ পাওয়া যায় সেগুলোর কোনো একটি নির্দিষ্ট রোগীর জন্য প্রযোজ্য হতে পারে।

যেহেতু, হাড় ক্ষয় (অস্টিওপরোসিস) একবার হলে ভাল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ, তাই একে আগে ভাগেই রোধ করার জাতীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসূচি নিতে হবে। এর অংশ হিসেবে কারা কতটুকু ঝুঁকিতে আছেন বা কারা এর মধ্যেই হাড় ক্ষয়ে ভুগছেন, তা নির্ধারণ করতে হবে এবং উপযোগী চিকিৎসা নির্বাচন ও প্রয়োগ করতে হবে।

হাড় ক্ষয় রোধে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো বিবেচনা করা যেতে পারে-

* নিয়মিত ব্যায়াম

* স্টেরয়েডসহ ক্ষতিকারক ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকা

* পুষ্টি নিশ্চিতকরণ

* ধূমপান ত্যাগ

* প্রয়োজনে পরিমিত ক্যালসিয়াম সেবন