ইভিএমকে অগ্রাধিকারে রেখেই ভোটের কৌশল

ফানাম নিউজ
  ১০ মে ২০২২, ০৭:৫৬

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কৌশল কী হবে, সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে দলীয় সূত্রগুলো বলছে, ভোট গ্রহণে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহারকে অগ্রাধিকারে রেখে নির্বাচনী কৌশল ঠিক করছে ক্ষমতাসীন দলটি।

ইভিএম নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সন্দেহ–অবিশ্বাস থাকলেও আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন আওয়ামী লীগ সরকারের একটা বড় সাফল্য। তাই প্রযুক্তিনির্ভর ইভিএম ব্যবহার করে ভোট গ্রহণের বিষয়টিকে তারা অগ্রাধিকার দিচ্ছে। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধী সব দলের অংশগ্রহণ করুক, সেটাও চাচ্ছে সরকারি দল। দলের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলকে ছাড়া নির্বাচন দেশে–বিদেশে বিতর্ক সৃষ্টি করবে। তাই বিরোধীদের নির্বাচনে আনতে তাদের কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয় কৌশল নেওয়ার কথাও ভাবছে সরকার।

গত শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে ছিলেন এমন আটজন নেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা জানান, শনিবারের বৈঠকে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা দুটি বিষয় মোটামুটি স্পষ্ট করেছেন। এক. আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ইভিএমে। দুই. ভোটে বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণ থাকবে।

তবে ইভিএমে ভোট গ্রহণের ব্যাপারে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর জোরালো আপত্তি আছে। ফলে আগামী নির্বাচনে বিরোধী সব দলের অংশগ্রহণ দেখতে চাওয়ার ক্ষেত্রে এটি একটা বাধা হয়ে দেখা দিতে পারে বলে রাজনৈতিক সূত্রগুলো মনে করছে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির দীর্ঘদিনের দাবি, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা। এই দাবির বিষয়ে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়ার ইচ্ছা নেই আওয়ামী লীগের। এটা বিএনপিও জানে। ফলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে, এমন নিশ্চয়তা সরকারসহ দেশে-বিদেশের প্রভাবশালী মহলের কাছে চাইতে পারে বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত হওয়ার মতো কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। এমনকি পর্দার অন্তরালে রাজনৈতিক সংলাপের সম্ভাবনা নিয়েও সরকারি দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা আছে।

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক শেষে গত শনিবার রাতে গণভবনের ফটকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘বিরোধী দল তাদের মিটিং-মিছিল-সমাবেশ স্বাধীনভাবে করুক। আমাদের তরফ থেকে বাধা সৃষ্টির কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত হচ্ছি। বিরোধী দলও যারা যারা নির্বাচন করবে, তাদের স্বাগত। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে।’

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া উপায় ছিল না বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। কারণ, দলটি ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল। গত নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী, তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়—এটাও প্রমাণ করার তাগিদ ছিল বিএনপির। তবে এখন প্রেক্ষাপট পাল্টেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও নিবন্ধন বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

সরকারি দলের উচ্চপর্যায়ের সূত্র বলছে, তাদের চিন্তার বিষয় হচ্ছে—২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়েই দেশে–বিদেশে অনেক সমালোচনা আছে। বিএনপিসহ বিরোধীদের বর্জনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনে আরেকটি সরকার গঠন করলে বড় সমালোচনায় পড়তে হবে। এ ছাড়া একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ তৈরি হতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য বিএনপিসহ বিরোধীদের ভোটে আনতে চাইছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপিকে ভোটে আনতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে—এমন দেশি–বিদেশি মহলকেও যুক্ত করার চেষ্টা হতে পারে। ২০১৮ সালের মতো আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি যদি বৃহত্তর কোনো জোটের উদ্যোগ নেয়, তাতে সরকার বা আওয়ামী লীগ বাধা সৃষ্টি করবে না। এরপরও বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব ভোট বর্জনের দিকে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিএনপিকে ভেঙে একটা অংশকে নির্বাচনে আনার কৌশল বাস্তবায়নের দিকে যেতে পারে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সামনের নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। বিএনপিসহ বিরোধী সব দল তাতে অংশ নেবে বলে আওয়ামী লীগ আশা করছে। বিএনপিসহ বিরোধীদের ভোটে আনতে আওয়ামী লীগ ভূমিকা রাখবে। তিনি ইভিএমের বিষয়ে বলেন, প্রযুক্তির ভালো দিকই বেশি। ইভিএম খুবই সহজ একটা ব্যবস্থা। এরপরও বিরোধীদের কোনো আপত্তি থাকলে আলোচনা হতে পারে। এর মাধ্যমে সমাধান বেরিয়ে আসবে।

সূত্র: প্রথম আলো