অবিশ্বাস্য, জাদুকরী ম্যাচে লক্ষ্ণৌর কাছে কলকাতার হার

ফানাম নিউজ
  ১৯ মে ২০২২, ১২:০৫

অবিশ্বাস্য, জাদুকরী, রোমাঞ্চকর; আসলে বিশেষণ দিয়েও কলকাতা নাইট রাইডার্স-লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের মধ্যকার ম্যাচটি ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। দর্শকদের কপালে ক্ষণে ক্ষণে চিন্তার ভাঁজ ফেলে, ম্যাচটিকে সরল দোলকের মতো দোদুল্যমান রেখে শেষ বলে এসে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় ম্যাচটিতে।

যেখানে মাত্র ২ রানের জয় দেখে লক্ষ্ণৌ। মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে কুইন্টন ডি ককের ঝড়ো শতক ও ক্যারিয়ারসেরা টি-টোয়েন্টি ইনিংসের সুবাদে বিনা উইকেটে ২১০ রান তোলে লক্ষ্ণৌ। জবাবে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৮ উইকেটে ২০৮ রান তুলে ২ রানের হারের আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় কলকাতাকে। এই জয়ে লক্ষ্ণৌ প্লে-অফের জন্য কোয়ালিফাই নিশ্চিত করলো। অপরদিকে এবারের আইপিএল থেকে ছিটকে গেলো কলকাতা।

ডি ওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে লোকেশ রাহুল ও ডি কক জুটি রেকর্ড গড়েন। ওপেনিংয়ে নেমে পুরো ২০ ওভার খেলে তারা তোলেন ২১০ রান। যা আইপিএলের ওপেনিং জুটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগের রেকর্ড ছিল বেয়ারস্টো ও ওয়ার্নারের ১৮৫ রান। এদিন রাহুল ছিলেন শান্ত, অপরদিকে ডি কক ২২ গজে তুলেছিলেন সাইক্লোন।

৭০ বলে ডি ককের ব্যাট থেকে আসে ১৪০ রান। যেখানে ১০টি করে চার ও ছয়ের মার ছিল। অপরপ্রান্তে ৫১ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছয়ে ৬৮ রানের ইনিংস খেলেন।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম তিন ওভারে কলকাতা ২ উইকেট হারিয়ে তোলে মাত্র ১১ রান। এরপরে নিতিশ রানা ও শ্রেয়াস আইয়ার আক্রমণ শুরু করে। ২২ বলে ৪২ রান করে ফেরেন নিতিশ। অপর প্রান্তে ফিফটি স্পর্শ করে ফেরেন শ্রেয়াস। তাদের সঙ্গে স্যাম বিলিংস খেলেন ৩৬ রানের ইনিংস। এই তিন ব্যাটসম্যানের ব্যাটে জয়ের আশা দেখতে থাকে দলটি।

এরপর আন্দ্রে রাসেল এসে ১১ বল থেকে মাত্র ৫ রান করে কলকাতাকে প্রায় ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন। শেষ ২০ বলে তখন কেকেআরের প্রয়োজন ৬১ রান। লক্ষ্ণৌর জয় তখন সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল। এমনকি ধারাভাষ্যকাররাও কেকেআরের হারের ঘোষণা দিয়ে দিয়েছিল।

তবে চমক বাড়িয়ে দেন সুনীল নারিন ও রিঙ্কু সিং। এই দুই ব্যাটসম্যান আড়াইশোর বেশি স্ট্রাইক রেটে রান তুলতে থাকেন। আঠারো ও উনিশতম ওভারে ১৭ রান করে তোলায় শেষ ৬ বলে ২১ রান প্রয়োজন হয় কলকাতার। এই লক্ষ্যকে রিঙ্কু সিং হাতের মোয়াই বানিয়ে ফেলছিলেন।

স্টয়নিসের সেই ওভারের প্রথম বলে চারের পর টানা দুই বলে হাঁকান ছয়। শেষ তিন বলে তখন কলকাতার প্রয়োজন মাত্র ৫। ম্যাচে তখন ফেভারিট কলকাতা। এরপরের বলে আবার ২ নেন রিঙ্কু। পঞ্চম বলে এসে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন ফিল্ডার এভিন লুইস। অফসাইডের বাইরের বল উড়িয়ে মারেন রিঙ্কু।

বাউন্ডারি লাইন থেকে ৩০ মিটারের বেশি দৌড়ে এসে বাঁহাতি অকল্পনীয় এক ক্যাচ ধরেন এই ক্যারিবিয়ান। মাঠে উপস্থিত দর্শক থেকে শুরু করে কোনো ক্রিকেটার, এমনকি স্বয়ং বোলার স্টয়নিসও বিশ্বাস করতে পারেনি উইকেট পেয়ে গেছেন তিনি। ধারাভাষ্যকাররা তো এটিকে আইপিএলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্যাচ বলেই দাবি করে বসেন।

১৫ বলে ৪০ রান করে রিঙ্কু বিদায় নিলে ১ বলে ৩ রান লাগতো কলকাতার। মাঠে ছিলেন ৭ বলে ২১ রান করা নারিন। তবে ক্রিকেটের নতুন নিয়মের কারণে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাকে। ইনিংসের শেষ বলে স্ট্রাইক পান উমেশ যাদব। যাকে নিখুঁত ইয়র্কারে বোল্ড করে দলকে ২ রানের জয় এনে দিয়ে পাগলুটে ম্যাচের ইতি টানেন স্টয়নিস।

সূত্র: আরটিভি