সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে : ফখরুল

ফানাম নিউজ
  ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:৩৬

সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গত ১৪ দিনে সারাদেশে দলের নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের দমনপীড়নের চিত্র তুলে ধরে এ কথা বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, এই সরকারকে অবশ্যই সরে যেতে হবে এবং সরে গিয়ে নিরপেক্ষ একটা তত্ত্বাধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। একই একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে-এই লক্ষ্যেই আমরা এগোচ্ছি।

তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি চলতেই থাকবে। ১০ তারিখ পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি আছে সারা দেশে। এরপর আবার নতুন কর্মসূচি দেব। এই আন্দোলন চলবে চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত।

বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম গঠন করে আন্দোলনকে বেগবান করার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমাদের আলোচনা এখনো চলছে। আপনারা জানেন, সব জিনিসের একটি টিটবিটস থাকে আরকি। আমরা আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যে এটাকে চূড়ান্ত করে আমরা জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।

গত ২২ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশ বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, নরসিংদী, ঢাকা, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, লক্ষীপুর, যশোর, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, খুলনা, বাগেরহাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, জামালপুর ও ময়মনসিংহে দলীয় কর্মসূচি পালনের সময়ে ক্ষমমতাসীন দল ও পুলিশি হামলার ঘটনায় হতাহত ও গ্রেপ্তার তালিকা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, সারাদেশে নিহত হয়েছে তিনজন, আহত হয়েছে ২ হাজারের অধিক নেতাকর্মী। গ্রেপ্তারের সংখ্যা দুই শতাধিক। সারাদেশে নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৮১ জনের অধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এবং অজ্ঞাত আসামি প্রায় ২০ হাজার। সারাদেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে ২০ থেকে ২৫টি স্থানে। এছাড়া বাড়িঘর ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে ৫০টি স্থানে।

ফখরুল বলেন, কর্তৃত্ববাদী গণবিরোধী ফ্যাসিস্ট সরকারবিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষদের হত্যা, গ্রেপ্তারের যে অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে তা বন্ধের আহবান জানাচ্ছি। যারা নিহত হয়েছে তাদের নিরপেক্ষ তদন্ত করে হত্যাকারী ও হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানাচ্ছি। হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

তিনি বলেন, সরকার যদি অশুভ তৎপরতা বন্ধ না করে তাহলে জনগণের ঐক্যের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা ক্রমান্বয়ে গণবিস্ফোরণে পরিণত হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের তো.. একটা কথা আছে না দুরাত্মার ছলের অভাব নেই। আওয়ামী লীগের কোনো ছলের অভাব নেই। ওরা প্রতি মুহূর্তে ছল তৈরি করে এবং ছল তৈরি করে আন্দোলনকে বিপথে পরিচালিত করে, গণতন্ত্রকে ধ্বংশ করে....এগুলো তাদের একটা কমন ব্যাপার আরকি।

তিনি বলেন, আমি সবসময় আপনাদের বলি, আওয়ামী লীগের বডি কেমেস্ট্রি একটা আছে। যে বডি কেমেস্ট্রিতে আছে সেটা হচ্ছে সন্ত্রাস। সন্ত্রাসে তাদের জন্ম, সন্ত্রাস দিয়ে তারা রাজনীতি করে এবং সন্ত্রাস দিয়ে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করে।

তিনি আরও বলেন, সরকার মাঠে হাজার হাজার মানুষ নিয়ে যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, যে প্রতিবাদ করছে, এটাতে তাদের (সরকার) মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আমি প্রতিবাদ করছি যেকোনো বিষয়ে। আপনি আমাকে গুলি করে দেবেন। এর থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘন কী হতে পারে?

মির্জা ফখরুল বলেন, শাওন হত্যা মামলা আমরা আজকে দায়ের করেছি। আমাদের দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিবের নেতৃত্বে ২২ জনকে আসামি করে এই মামলা দায়ের করা হয়েছি। আমরা প্রত্যেক খুন-জখম-হত্যার বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। একদিকে রাজপথে আন্দোলন করছি। এটাকে আরও বেগবান করব।

তিনি বলেন, রাজপথের আন্দোলনকে অলরেডি জনগণ সম্পৃক্ত হচ্ছে-এটাতেই আওয়ামী লীগের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। জনসমুদ্র দেখে তারা ঘাবড়ে গেছে, ভয় পেয়েছে। এজন্য তারা পাল্টা ভয় দেখাতে শুরু করেছে।

মিয়ানমার সীমান্তে মর্টার শেল প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আসল কথা হচ্ছে একটা অনির্বাচিত সরকার দিয়ে এসব হয় না। যারা নির্বাচিত না, যাদের পিপলস সাপোর্ট নেই তাদের তো শক্তি থাকে না। এই সরকারের তো কোনো শক্তি নেই। সে টিকে আছে অন্যদের শক্তিতে। যে কারণে তার নিজের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে তার যে ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন সেই ভূমিকা সে নিতে পারে না।

তিনি বলেন, ওই বিদেশিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যেটা আমি সবসময় বলি একটা নতজানু পররাষ্ট্র নীতি-এটা ছাড়া সে টিকেও থাকবে না। সেজন্য ওটাই সে করে। এই ঘটনার যেভাবে প্রতিবাদ হওয়া উচিত ছিল, যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ছিল…। এটা সেকেন্ড টাইম হলো। এখন তারা (সরকার) যেটা করবে অ্যাম্বেসেডরকে ডেকে বলবে। পরে বলবে যে শক্ত ভাষায় তাকে বলা হয়েছে। ঠিক আছে এটা ডিপ্লোমেটিক নর্মে...।

তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সমস্যার সমাধান এমনিতে হবে না। মিয়ানমারের সঙ্গে সমস্যার সমাধান করতে হলে তার ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করতে হবে। রোহিঙ্গাদেরকে ফেরত নেওয়ার জন্য তাকে একটা আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে। এই আন্তর্জাতিক সৃষ্টির জন্য সবচেয়ে যেটা প্রয়োজন হেড অব গর্ভামেন্ট তাকেই বিভিন্ন দেশে যেতে হবে এবং যারা রোহিঙ্গা ইস্যুতে সম্পর্ক আছে ভারত ও চীন এই দুইটা দেশকে কনভিনস করতে হবে যে, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য। এটা প্রথম কথা। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে যে, শক্তি অর্জন করতে হলে যেদিকে মর্টার মারল, ওদিকেও যাতে মর্টার যায়।