নির্বাচনের পর ষড়যন্ত্রকারীদের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ফানাম নিউজ
  ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:১১

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি বহু ষড়যন্ত্র ছিল। কিন্তু নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সবাই যখন শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বার্তা পাঠানো শুরু করলো সেটা দেখে ষড়যন্ত্রকারীদের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, গত ৭ জানুয়ারি দেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। এ নির্বাচনে সহিংসতা হয়নি বললেই চলে, ভোট পড়েছে ৪২ শতাংশ। তবে নির্বাচন বন্ধ করার অনেক চক্রান্ত ছিল। তারপরও উৎসবমুখর নির্বাচন হয়েছে। যারা নির্বাচন বর্জন করেছিল, বানচালের ষড়যন্ত্র করেছিল, তাদের মুখটা এখন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। তারা এখন আবোল-তাবোল বলা শুরু করেছে।

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের যেখানেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যান সেখানেই তিনি ‘সেন্টার অব অ্যাট্রাকশন’ হন। গাজায় নির্বিচারে যে গণহত্যা হচ্ছে তা নিয়ে বিশ্বনেতারা যখন নিশ্চুপ-নির্বিকার, সেখানে এ গণহত্যা বন্ধ করতে জোরালভাবে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। গাজায় হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই নারী-শিশু। অথচ এই গণহত্যা দেখেও অনেকে নীরব থাকছেন। এই নীরবতা অপরাধকে সমর্থন জানানোর শামিল।

তিনি বলেন, কিন্তু জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গাজায় যা হচ্ছে তা গণহত্যা। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। তিনি জেলেনস্কিকে (ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট) যুদ্ধ বন্ধের পথ বের করার কথা জানিয়েছেন। তিনি মানবতার মা, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার সময় তিনি ঘরের দুয়ার শুধু নয়, মনের দুয়ারও খুলে দিয়েছিলেন। রোহিঙ্গা শিবিরে প্রতি বছর ৩৫ হাজার শিশুর জন্ম হচ্ছে। এটা আমাদের মত ঘনবসতিপূর্ণ দেশের জন্য অন্যতম সমস্যা। এজন্য আমাদের লক্ষ্য মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনায় বসে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার নিয়ে উদাহরণ হিসেবে হাছান মাহমুদ বিভিন্ন দেশে ভোট পড়ার তথ্য সংসদে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, রোমানিয়ায় ২০২০ সালের নির্বাচনে ৩১ দশমিক ৮৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। হংকংয়ে ৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে। বুলগেরিয়ায় ২০২২ সালের নির্বাচনে ৩৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ, আয়ারল্যান্ডে ৪৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। পর্তুগালে ৩৯ দশমিক ২৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ রয়েছে, যেখানে নির্বাচন প্রতিহতের কোনো ঘোষণা ছিল না। কিন্তু আমাদের দেশে কীভাবে নির্বাচন বন্ধের ঘোষণা হয় তা সবাই জানেন। তারপরও যেভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে সেটিকে ‘ফেসটিভ ইলেকশন’ বলা চলে। ভোটের দুদিন আগে ৫ জানুয়ারি ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো না হলে নির্বাচনে আরও ১৫-২০ শতাংশ ভোট বেশি পড়তো।

ড. হাছান বলেন, যে অপশক্তি নির্বাচন বর্জন করেছিল তারাই নির্বাচনের পর উন্মুখ হয়ে বসেছিল, বিশ্ববাসী এ নির্বাচন নিয়ে কী বলে তা শুনতে। কিন্তু বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশ আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে টানা চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হওয়ায় শুভেচ্ছায় ভাসিয়েছেন। ৩২টি আন্তর্জাতিক সংস্থা শুভেচ্ছা জানিয়েছে। তার মধ্যে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউরোপীয় কমিশন ও বিশ্বব্যাংক রয়েছে। তখন অপশক্তি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বহু দেশ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীরতর করার কথা বলেছেন। গত ১৫ বছরে এদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তা বিশ্বে উদাহরণ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সূচকে ১২৩ থেকে ১১৬তম দেশে উন্নীত হয়েছি আমরা। বাংলাদেশ এখন জিডিপিতে ৩৫তম অর্থনীতির দেশ, আর পিপিপিতে ৩১তম। বিভিন্ন সূচক বলছে, ২০৩৭ সালে বাংলাদেশ হবে ২০তম অর্থনীতির দেশ। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, মাথাপিছু আয়ের দেশ হিসেবে ভারতকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক সূচক, সামাজিক সুরক্ষা সূচকসহ সব ধরনের সূচকে আমরা পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছি। পাকিস্তান এখন আমাদের দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, হাহুতাশ করে। এখানেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ রচনা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ পরিচালনার স্বার্থকতা।

ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি তখন আমাদের জিডিপির আকার ছিল ৮০ বিলিয়ন ডলার। আজকে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ৫০০ বিলিয়ন ডলার। আজকে গ্রাম শহর হয়ে গেছে। আয়তনের দিক থেকে বিশ্বে আমরা ৯২তম দেশ। কিন্তু ধান উদপাদনে আমরা তৃতীয়, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ ও ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম। এগুলো সব সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে।