উড়িষ্যায় রেল দুর্ঘটনা: আহত দুই বাংলাদেশির খোঁজ

ফানাম নিউজ
  ০৪ জুন ২০২৩, ০৪:৩১

ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের বালেশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ২৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় ৯০০ জন। আহতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত দুইজন বাংলাদেশির খোঁজ পাওয়া গেছে। তাদের কটক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বালেশ্বরের ফকির মোহন মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের অর্থোপেডিকস ডিপার্মেন্টের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর টি সুরেশ কুমার গুপ্ত বলেন, আমাদের হাসপাতালে আহত দুইজন বাংলাদেশি পুরুষকে আনা হয়েছিল। তাদের অবস্থা খুবই গুরুতর ছিল। তারা কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। তারা ঠিকমতো তাদের নাম পরিচয়ও বলে পারছিলেন না। তবে তারা শুরু জানাতে পেরেছেন যে তারা বাংলাদেশি।

তিনি আরও বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের কটক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনটিতে আরও বাংলাদেশি থাকতে পারে বলে জানা গেছে। চিকিৎসার জন্য অনেক বাংলাদেশি যাত্রী এই ট্রেনে কলকাতা থেকে চেন্নাই যাতায়াত করেন। এ কারণে উপহাইকমিশন দুর্ঘটনাবিষয়ক তথ্য জানতে বাংলাদেশিদের জন্য একটি হটলাইন (+৯১৯০৩৮৩৫৩৫৩৩ হোয়াটসঅ্যাপ) নম্বর দিয়েছে।

কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশন শুক্রবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই হটলাইনের কথা জানায়।

বালেশ্বরে দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল এসকে দত্ত জানান, সেনাবাহিনী গতকাল রাত থেকে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে নিয়োজিত রয়েছে এবং কলকাতা থেকে আরও সেনা সদস্যকে ডাকা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও তামিলনাড়ুর মন্ত্রী উদয়নিধি, শিব শঙ্কর ও আনবিল মহেশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে রওনা হয়েছেন।

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন ওড়িশার ট্রেন দুর্ঘটনা পর্যালোচনা করতে চেন্নাইয়ের স্টেট ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার পরিদর্শন করেছেন।

উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। একইসঙ্গে দুর্ঘটনার পর হাওড়াগামী ৪২টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে অনেক ট্রেনের রুট পরিবর্তন করা হয়েছে।

শনিবার তামিলনাড়ুর ডিএমকে’র প্রতিষ্ঠাতা এবং রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এম করুণানিধির ১০০তম জন্মবার্ষিকী। ডিএমকে এই বিষয়ে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে শনিবারের সেসব কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।

দুর্ঘটনায় একদিনের শোক ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। এসময় কোনো উৎসব হবে না। বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডাও বিজেপির সমস্ত কর্মসূচি বাতিল করেছেন।

রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের মনোযোগ ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযানে। ছাড়পত্র পেলেই মেরামতের কাজ শুরু হবে। কিছু মৃতদেহ এখনও অনেক ট্রেনের বগিতে আটকে আছে যা বের করার চেষ্টা চলছে।’

ঘটনাস্থলে পৌঁছে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, ‘এটি একটি বেদনাদায়ক দুর্ঘটনা। রেল, এনডিআরএফ, এসডিআরএফ এবং রাজ্য সরকার উদ্ধারকাজে নিযুক্ত রয়েছে। উন্নত স্বাস্থ্য সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়। দুর্ঘটনা তদন্তে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি রেলওয়ে নিরাপত্তা কমিশনারও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখবেন।’

শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে উড়িষ্যার বালেশ্বর স্টেশন থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে বাহানাগাঁ স্টেশনের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। হাওড়া থেকে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের অন্তত ১৫টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পাশের ট্র্যাকে পড়ে যায়। সে সময় অন্যদিক থেকে আসা যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট ট্রেনটি লাইনচ্যুত বগিগুলোকে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। একটি মালবাহী ট্রেনও সেখানে দুর্ঘটনায় পড়ে। অন্য একটি সূত্র বলছে, প্রথমে হাওড়া-ব্যাঙ্গালুরু এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়। সেসব বগিতে ধাক্কা দিয়ে মালবাহী ট্রেনের ওপর ছিটকে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস।