ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আবারও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা। টানা বৃষ্টিপাত ও ঢলের পানিতে শনিবার (৩১ মে) সকাল থেকে গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়ক তলিয়ে গেছে। এতে ওই অঞ্চলের যানচলাচল ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি জনদুর্ভোগও চরমে পৌঁছেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভোররাত থেকেই পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত প্রবাহিত হয়ে বিভিন্ন খাল ও ছড়া উপচে মূল সড়কে উঠে আসে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাধানগর সড়কটি পানিতে তলিয়ে যায়। শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ ও রোগীবাহী যানবাহন চলাচলে চরম বিঘ্ন ঘটে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকরের স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস (৫০) বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি সড়কজুড়ে পানি। পরে অনেক কষ্টে বাজারে এসেছি।
নোয়াগ্রাম এলাকার গ্রামের সালেহা বেগম (৩৫) বলেন, আমাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এই রাধানগর সড়ক। এখন সেটা তলিয়ে গেছে। সকালে কাজে যেতে পারিনি। ভারতের পানি আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে, প্রতি বছর তারা আমাদের সঙ্গে দেখা করে যায়।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, চেরাপুঞ্জির প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি ঢল নেমে এসেছে। ইতোমধ্যে গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার বেশ কিছু নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। পরিস্থিতি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।
তিনি আরও বলেন, সারি, ধলাই ও পিয়াইন নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি রয়েছে। এটি যে কোনো মুহূর্তে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। উজানের ঢলের পানি কয়েকদিন প্রবাহিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
এদিকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেকে শনিবার সকাল ৮টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত) ৪১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অতিপ্রবল বৃষ্টিপাতের কারণেই সিলেটের নদ-নদীতে পানি বাড়ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ রুদ্র তালুকদার বলেন, শনিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সিলেটে ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হলেও দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে এবং বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী বলেন, চেরাপুঞ্জিতে ৪১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কারণে সেই ঢল বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়েছে। গোয়াইনঘাটের রাধানগর সড়ক দিয়ে পানি একপাশ থেকে অপর পাশে প্রবাহিত হচ্ছে। রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছে। আমি নিজেও একটু আগে এই রাস্তা দিয়ে এসেছি। সার্বিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি এখনও হয়নি। তারপরও আমরা প্রস্তুত রয়েছি। বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। আমাদের উপজেলা প্রশসন থেকে তদারকি করা হচ্ছে। আমরা জনসাধারণকে বলবো, আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকুন। যে কোনো প্রয়োজনে আপনারা উপজেলা প্রশাসনকে পাশে পাবেন।