‘বছরে ১২ হাজার নারীর জরায়ু-স্তন ক্যানসারে মৃত্যু একটি বড় বিপর্যয়’

ফানাম নিউজ
  ১২ জুলাই ২০২৩, ০০:০৩

প্রতি বছর কমপক্ষে ১২ হাজার নারী জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যানসারে মারা যাচ্ছেন, যা একটি বড় বিপর্যয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

তিনি বলেন, এভাবে মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না এবং এর দায় আমরা এড়াতে পারি না। কারণ একটু সচেতন হলে, একটু দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখলে এবং প্রয়োজনীয় তথ্যটি সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে পারলে এ মৃত্যু এড়ানো যায়।

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে আয়োজিত জরায়ু-মুখ ক্যানসার ও স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জরায়ু ক্যানসর প্রতিরোধ যোগ্য এবং এর জন্য ভ্যাক্সিনও রয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যথাযথ স্ক্রিনিংসহ আরলি ডায়াগনোসিসের মাধ্যমে আগেভাগে স্তন ক্যানসার নির্ণয় করতে পারলে এ রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। এর সমাধন আমাদের নিজেদের কাছেই রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নিজে নিজেও স্তন পরীক্ষা করা সম্ভব। রয়েছে বিনামূল্যে ভায়া টেস্ট ও সিবিই টেস্টের সুবিধা। তারপরও এ মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। মায়েদের সুস্বাস্থ্যসহ জীবন রক্ষায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে, দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের অভাবে, একটু সচেতনতার অভাবে স্তন ক্যানসার ও জরায়ু মুখের ক্যানসারে মৃত্যু কাম্য হতে পারে না। এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতন করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোকে কাজে লাগানো, পাঠ্যপুস্তকে প্রয়োজনীয় বিষয় অন্তর্ভুক্ত করাসহ ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করে তা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

মন্ত্রী তার বক্তব্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিজের বাসা, বাড়ি-ঘর পরিষ্কার রাখা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠান, অফিসসমূহ পরিষ্কা রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মাথাপিছু আয়, বিদ্যুৎ উৎপাদান, গড় আয়ু, স্বাস্থ্যখাতসহ সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কমিউনিটি ক্লিনিক আজ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত, সমাদৃত ও স্বীকৃত।

উপাচার্য বলেন, জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ জরায়ু-মুখ ক্যানসার প্রতিরোধ ও স্তন ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে স্কুল হেলথ ক্লিনিক চালু একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কার্যক্রমের মধ্যে প্রয়োজনীয় সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় জরায়ু-মুখ ক্যানসার প্রতিরোধ ও চিকিৎসা, স্তন ক্যানসার নির্ণয় ও চিকিৎসাসহ বহুমুখী কার্যক্রম দেশব্যাপী পরিচালনা করছে। এ ক্ষেত্রে সাফল্যও এসেছে। অতীতের তুলনায় জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের হার কিছুটা কমেছে। তবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে এখনো স্ক্রিনিং কার্যক্রমের আওতায় অনা যায়নি। এটা বাস্তবায়ন করা গেলে এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হবে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা এ ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধে ফাস্টফুড জাতীয় খাবারের পরিবর্তে ঘরের তৈরি খাবার খাওয়া, ফলমূল ও শাক-সবজি বেশি খাওয়া, মেয়ে শিশুদের যথাসময়ে জরায়ু-মুখ ক্যানসারের ভ্যাক্সিন প্রদান নিশ্চিত করা, কুসংস্কার দূর করা ও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

কর্মশালায় গ্রুপ ওয়ার্ক উপস্থাপনা ও উন্মুক্ত আলোচনা পরিচালনা করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) একেএম নূরুন্নবী কবির। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক একেএম মোশাররফ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ছয়েফ উদ্দিন আহমদ। জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যানসার বিষয়ক কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক আশরাফুন্নেসা।