দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মা-বাবাদের চেয়ে বেশি ধার্মিক সন্তানরা!

ফানাম নিউজ
  ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:৩৬

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার, বিশেষ করে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মুসলিম পরিবারগুলোর প্রতি তিন সন্তানের একজন মনে করেন, তারা তাদের মা-বাবার থেকে বেশি ধার্মিক। সম্প্রতি এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

যদিও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়ার দেশগুলোতে পশ্চিমা ধাঁচের ভোগবাদও দিন দিন বাড়ছে। তা সত্ত্বেও মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মুসলিম পরিবারের অনেক সন্তান মনে করেন, তাদের বয়সে তাদের মা-বাবা এতটা ধর্ম বিশ্বাস রাখতেন না।

বুধবার ‘নিউ মুসলিম কনজ্যুমার’ পরিচালিত জরিপের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার এক হাজার ভোক্তার সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে রিপোর্টটি তৈরি করেছে নিউ মুসলিম কনজ্যুমার।

জরিপে অংশগ্রহণকারীরা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, ব্যক্তিগত খরচ, ফ্যাশন, ব্যাংকিং, পড়ালেখার পাশাপাশি নিজ ধর্ম বিশ্বাসকেও গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের প্রতি দৃঢ়বিশ্বাসও আছে তাদের।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর ৯১ শতাংশ মুসলিমই সৃষ্টিকর্তার প্রতি দৃঢ়বিশ্বাস রাখেন। ওই দেশ দুটির ২৫ কোটি মুসলমানের মধ্যে ৪৫ শতাংশ মনে করেন, তারা তাদের মা-বাবার চেয়ে বেশি ধার্মিক। বিপরীতে মাত্র ২১ শতাংশ মনে করেন, মা-বাবার চেয়ে তারা কম ধার্মিক। ৩৪ শতাংশ মনে করেন, সম্পদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ; ২৮ শতাংশ তাদের আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন এবং ১২ শতাংশ খ্যাতিকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ধর্মীয় বিশ্বাসের পাশাপাশি বেড়ে চলেছে পশ্চিমা ধাঁচের জীবনযাপন। ধর্ম বিশ্বাস এবং চাহিদার সঙ্গে মিলিয়ে শালীন ফ্যাশন, ফিটনেস থেকে শুরু করে মুসলিম ডেটিং অ্যাপস, হালাল ভ্রমণ চালু করা হয়েছে। এটিকে মুসলিম-প্রভাবিত উপভোক্তাবাদ বা ইসলাম ধর্মের বিধিনিষেধের সঙ্গে মিলিয়ে পশ্চিমা জীবনধারার মেলবন্ধ বলা যেতে পারে।

ওয়ান্ডারম্যান থম্পসন ইন্টেলিজেন্সের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ডিরেক্টর চেন মে ইয়ে বলেন, ‘মুসলিম গ্রাহকরা কেনাকাটার ক্ষেত্রে হারাম-হালালের বিষয়টি খুব বেশি মেনে চলেন। তা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে প্রভাব ফেলছে এবং ক্রমেই তা বেড়ে চলেছে’।

তিনি বলেন, মুসলমান ভোক্তারা কোনো জিনিস কেনার সময় হালাল, অর্থাৎ ইসলাম ধর্মে এটির অনুমতি আছে কিনা, সে বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। জরিপে অংশ নেওয়াদের ৯১ শতাংশ জানান, অর্থিক মূল্য বা গুণমান বিচারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো পণ্যটি হালাল কিনা।

আর্থিক লেনদেনের বা বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও হারাম-হালালের বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া হয়। ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ জানিয়েছেন, তারা ইসলামী শরিয়া আইন অনুযায়ী ব্যাংকিং ব্যবস্থা পছন্দ করেন। পর্যাপ্ত হালাল খাবার পাওয়া যায় এমন স্থানই ভ্রমণের জন্য বেছে নেন বলে জানিয়েছেন ৭৭ শতাংশ।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে পরিবারের প্রধান হচ্ছেন পুরুষ। জরিপে দেখা গেছে, নারী উপার্জনকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম। ৪২ শতাংশ নারীর বিপরীতে পরিবারে প্রধান উপার্জনকারী পুরুষের সংখ্যা ৭০ শতাংশ।

ধর্ম বিশ্বাস প্রভাব ফেলেছে ভার্চুয়াল দুনিয়াতেও। প্রযুক্তির উৎকর্ষ দিন দিন যেখানে বেড়েই চলেছে, সেখানে মুসলিমের জন্য আলাদা ভার্চুয়াল স্পেস চেয়েছেন জরিপের অংশ নেওয়াদের ৮৫ শতাংশ। আর ৭৮ শতাংশ জানান, নেট দুনিয়ায় তারা ধর্মীয় কনটেন্ট দেখতে আগ্রহী। ৫৯ শতাংশ মনে করেন, ইসলাম ধর্মের মূল শিক্ষার সঙ্গে ভার্চুয়াল দুনিয়া সংগতিপূর্ণ নয়।