ইরানের বিক্ষোভকারীদের এবার হুমকি দিল সেনাবাহিনী

ফানাম নিউজ
  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:০৯

সঠিক নিয়মে হিজাব না পরার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের হেফাজতে মাশা আমিনি নামে এক তরুণীর মৃত্যুতে ইরানে নারীদের পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, তা টানা ৭ দিনেও প্রশমিত না হওয়ায় এবার ইরানের আন্দোলনকারীদের হুমকি দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘গত সাত দিন ধরে দেশে যে উন্মত্ততা চলছে- তা দেশের ইসলামি শাসন ব্যবস্থাকে নস্যাৎ করার অশুভ চক্রান্তের অংশ। যদি অবিলম্বের এই বিক্ষোভ বন্ধ না হয়, সেক্ষেত্রে শত্রুদের মোকাবিলা করতে মাঠে নামতে বাধ্য হবে সেনা সদস্যরা’।

ইরানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বিক্ষোভের তেজ কমাতে দেশটির সরকারপন্থীরাও আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে। আজ শুক্রবার থেকেই তাদের আন্দোলনও শুরু হওয়ার কথা।

মাথায় হিজাব না থাকায় ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে (মর‌্যালিটি পুলিশ) গ্রেপ্তারের পর হেফাজতে থাকা অবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হওয়া এবং পরে হাসপাতালে মারা যাওয়া তরুণী মাশা আমিনির (২২) মৃত্যুতে ক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইরান। আজ শুক্রবার বিক্ষোভের সপ্তম দিন চলছে।

কুর্দি নারী মাহসা আমিনিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেপ্তার করে। ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সাকেজ থেকে ভাইয়ের সঙ্গে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি।

পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়েই মাহসার হার্ট অ্যাটাক হয়, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। ২২-বছর বয়সী কুর্দি নারী মাহসা আমিনি কোমায় তিন দিন কাটানোর পর শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালে মারা যান।

পুলিশ মাহসাকে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরিবারের অভিযোগ গ্রেপ্তারের পর তাকে পেটানো হয়। পুলিশ আমিনির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল যে তিনি নারীদের হিজাব বা চাদর দিয়ে চুল ঢেকে রাখা এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরার আইন ভঙ্গ করেছেন। পুলিশের একটি ডিটেনশন সেন্টারে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পরপরই তিনি কোমায় চলে যান।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল-নাশিফ বলেছেন, পুলিশ মিজ আমিনির মাথায় লাঠি দিয়ে বাড়ি মারে এবং তাদের একটি গাড়ির সাথে আঘাত করার পর তার মাথা ফেটে যায়।

মাহসার মৃত্যুর পর থেকেই উত্তাল ইরান। ফেসবুক ও টুইটারে #mahsaamini এবং #Mahsa_Amini হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে চলছে প্রতিবাদ। দেশটির বিভিন্ন জায়গায় নারীর পোশাকের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে নিরাপত্তা বাহিনীর।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা ‘স্বৈরশাসকের মৃত্যু’ ‘খামিনির মৃত্যু’, ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন। কিছু নারী বিক্ষোভকারীকে হিজাব খুলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলতেও দেখা গেছে। প্রতীকীভাবে নারীদের চুল কেটে ফেলার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে ফেসবুক-টুইটারে।

হিজাব আইন আরও কঠোরভাবে প্রয়োগের জন্য চলতি বছরের ৫ জুলাই ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি একটি আদেশ জারি করেন। এর মাধ্যমে ‘সঠিক নিয়মে’এবং ইসলামি পোশাক না পরা নারীদের সরকারি সব অফিস, ব্যাংক এবং গণপরিবহনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।