ইট চুরি করতে করতে পুরো স্কুলই হাওয়া

ফানাম নিউজ
  ০৭ নভেম্বর ২০২২, ০২:১৭

চুরি বলতে আমরা সাধারণত বুঝে থাকি- কারও বাড়িতে বা কোনো প্রতিষ্ঠানে ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র ও টাকা-পয়সা নিয়ে যাওয়াকে। প্রতিদিনই দেশে-বিদেশে বিভিন্ন কায়দায় করা চুরির সংবাদ আমাদের সামনে আসে। কিন্তু কেমন হয়, যদি কোনো বাড়িতে বা প্রতিষ্ঠানে চুরি করতে গিয়ে গোটা স্থাপনাটিই সঙ্গে নিয়ে চলে আসে চোর?  

অবাক শোনাচ্ছে, তাই না? কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী কেপটাউনে আসলেই এমন চোখ ছানাবড়া করার মতো ঘটনা ঘটেছে। সেখানকার ইউটজিগ মাধ্যমিক স্কুলের একেকটি ইট চুরি করতে করতে পুরো স্কুলটিকেই উধাও করে দিয়েছে স্থানীয় মাদকচক্রের সদস্যরা।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০১৯ সালের শেষের দিকে স্কুলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর ছয় মাসের মধ্যেই স্কুলভবনের প্রতিটি ইট, জানালা, ছাদের টালি, টয়লেটের জিনিসপত্র, বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ, ব্ল্যাকবোর্ড ও পাইপ চুরি হয়ে যায়। এক কথায় শুধু ভিত্তিপ্রস্তরটি ছাড়া পুরো স্কুল ভবনটি হাওয়া হয়ে যায়।

স্কুলটি বন্ধ হওয়ার আগে এটির একটি ছবি নেয় গুগল আর্থ। তখন পুরোপুরি অক্ষত অবস্থায় ছিল এটি। কিন্তু কয়েক বছর পরে তোলা ছবিতে দেখা যায় লাল ইট ও টালির স্কুলটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। শুধু কংক্রিটের মেঝে রয়ে গেছে।

স্থানীয় দুর্বৃত্তদের ভয়ে নাম না প্রকাশের শর্তে স্কুলটির এক সময়ের তত্ত্বাবধায়ক বলেন, এটি একটি ভালো স্কুল ছিল। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে স্থানীয় মাদকচক্র স্কুলটিকে নিজেদের দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে আসছিল। দখল নিতে তারা এখানে নিয়মিত ভাঙচুর চালাতো।

‘একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ায় স্কুলটি সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৯ সালে এটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, আমি মজা করছি না। চোরেরা স্কুলটির একেকটি ইট ২৫ পাউন্ড ও একেকটি জানালা ৪৫০ পাউন্ডে বিক্রি করেছেন।

প্রাক্তন ছাত্র লোরনা বালাতা-পিটার্স বলেন, স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ভেতরের সবকিছু লুট হয়ে গেছে। স্কুলের দেয়ালে আমার খেলাধুলার স্মৃতিচিহ্ন ছিল। সেসব দেয়াল, ছাদ, জানালা এমনকি ইট পর্যন্ত নিয়ে চলে গেছে চোরেরা।

স্থানীয় পরিচ্ছন্নতাকর্মী জন আইজ্যাকস বলেন, আমরা জানি না, কারা এ ধরনের জঘন্য কাজের সঙ্গে জড়িত, তবে মাদকচক্রের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এটি ধ্বংস হয়ে গেছে।

ওয়েস্টার্ন কেপ প্রদেশের শিক্ষা বিভাগের মুখপাত্র ব্রনাঘ হ্যামন্ড বলেন, দুর্বৃত্তদের হামলা ও ভাঙচুরের কারণেই বিদ্যালয়টির এমন করুণ অবস্থা। আমরা নিরাপত্তারক্ষী ও কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দিয়েছিলাম, এরপরও ভাঙচুরকারীরা এসে শিক্ষকদের এমনকি, নিরাপত্তারক্ষীদের হুমকি দিয়ে যেতো।

'শেষ পর্যন্ত বারবার মেরামত করতে গিয়ে স্কুল চালানোর মতো আর কোনো অর্থ আমাদের কাছে ছিল না। তাছাড়া ক্রমাগত ভাঙচুরের মুখে পড়ায় স্কুলভবনও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। শেষমেষ আমরা এটিকে বন্ধ করে দিই। এর কয়েক মাসের মধ্যেই পুরো স্কুলটি উধাও হয়ে যায়।’