ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির বিরোধিতায় যুক্তরাষ্ট্র

ফানাম নিউজ
  ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:৪২

জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আব্দুল্লাহকে আশ্বস্ত করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, গাজা বা অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার বিরোধিতা করে ওয়াশিংটন। একই সঙ্গে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা শিগগিরই শুরুর প্রত্যাশা করেছেন তিনি। রোববার জর্ডানে বাদশাহ আব্দুল্লাহর সাথে বৈঠকে এই আশ্বাস দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

জর্ডানের রাজপ্রাসাদ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জর্ডানের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন বাদশাহ আব্দুল্লাহ।

গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে উপত্যকায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এতে উপত্যকার ২৩ লাখ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বর্তমানে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে বলে জাতিসংঘের দাতব্য কর্মীরা জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে বলেছেন, আম্মানে বাদশাহ আব্দুল্লাহর সাথে বৈঠকে ব্লিঙ্কেন পশ্চিম তীর ও গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির বিরোধিতা এবং পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ইসরায়েলি চরমপন্থী বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা থেকে সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।

চলমান সংঘাতে গাজার বেশিরভাগ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং রোববার জেনিনসহ পশ্চিম তীরে ভয়াবহ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। বৈঠকে বাদশাহ আবদুল্লাহ ব্লিঙ্কেনকে বলেছেন, গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পরপরই যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে ওয়াশিংটন। এ সময় তিনি গাজায় যুদ্ধ অব্যাহত রাখার ‘‘বিপর্যয়কর পরিণতি’’ সম্পর্কেও ব্লিঙ্কেনকে সতর্ক করে দেন।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে হামাস যোদ্ধারা অতর্কিত হামলা চালানোর পর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থলবাহিনীও।

ইসরায়েলি বাহিনীর তিন মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন ২২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী, শিশু, অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরী এবং বয়স্ক লোকজন। তাদের মধ্যে গত শনিবার নিহত হয়েছেন ১২০ জন।

আহত হয়েছেন আরও ৫৪ হাজার ৯৬৮ জন এবং এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ৭ হাজার জন। এছাড়া হাজার হাজার পরিবার বাড়িঘর-সহায় সম্বল হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনীর গত ৩ মাসের অভিযানে বাস্তুহারা হয়েছেন অন্তত ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি।

অন্যদিকে, হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। পাশাপাশি, ইসরায়েলের ভূখণ্ড থেকে ২৪২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিককে সেদিন জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা। তাদের মধ্যে এখনও মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছেন ১২৯ জন জিম্মি।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস এবং গাজাকে পরিপূর্নভাবে নিরস্ত্রীকরণ করার আগ পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলবে।

সূত্র: রয়টার্স, আলজাজিরা।