‘অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কের জেরে মাহমুদাকে হত্যা করেন বাবুল’

ফানাম নিউজ
  ০৩ মার্চ ২০২২, ০০:৩৪

অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কের জেরে সাবেক এসপি বাবুল নিজেই তাঁর ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে স্ত্রী মাহমুদা খানমকে খুন করেছেন বলে অভিযোগ করেছে তাঁর (বাবুল) শ্বশুরপক্ষ।

মঙ্গলবার ঢাকার বনশ্রীর বাসায় চট্টগ্রাম পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) একটি দলের কাছে বাবুলের শ্বশুরপক্ষ এ অভিযোগ করে। ওই দিন বিকেলে ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই।

বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, কক্সবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে কর্মরত থাকাকালে এক এনজিও নারী কর্মকর্তার সঙ্গে বাবুলের সম্পর্ক ছিল। এ কারণে তাঁর মেয়েকে বাবুল প্রায়ই নির্যাতন করতেন। বিষয়টি নিয়ে ওই সময় পারিবারিকভাবে সালিসও হয়। দুজনের সম্পর্কের চিঠি, উপহারসহ নানা কাগজপত্র পিবিআইকে দেওয়া হয়েছে।

বাবুলের শাশুড়ি সাহেদা মোশাররফও জানালেন একই কথা। তিনি বলেন, পারিবারিক সম্মানের ভয়ে তাঁরা বিষয়টি ওই সময় বাইরের কাউকে জানতে দেননি। তাঁর মেয়ে প্রায়ই তাঁকে বাবুলের সম্পর্কের কথা বলতেন।

মাহমুদার বোন শায়লা মোশাররফও একই কথাই বলেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন বাবুলের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী। তিনি বলেন, বাবুলকে ষড়যন্ত্র করে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনার পর বাবুল তাঁর শ্বশুরের বাসায় ছিলেন। তখন তাঁরা কিছু বলেননি। এখন নতুন করে ষড়যন্ত্র করছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক আবু জাফর মুহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, বাবুলের শ্বশুর, শাশুড়ি ও তাঁর শ্যালিকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

মাহমুদা হত্যার পরদিন ২০১৬ সালের ৬ জুন তাঁর স্বামী বাবুল বাদী হয়ে নগরের পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে পিবিআই গত বছরের ১২ মে এই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। একই দিন বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। এই মামলায় বাবুলসহ আটজনকে আসামি করা হয়।

বাবুলের করা মামলায় পিবিআইর চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৪ অক্টোবর আদালতে নারাজি আবেদন করেন তাঁর (বাবুল) আইনজীবী। ৩ নভেম্বর আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি গ্রহণ না করে পিবিআইকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। আদেশে বিচারক বলেন, এ মামলায় (বাবুলের করা) একটি সফল তদন্ত হয়েছে, যার মাধ্যমে খুনের মোটিভ ও আসামি শনাক্ত হয়েছে। তদন্তে দুজন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, দুই সাক্ষীর ১৬৪ ধারার জবানবন্দি, সিসিটিভি ফুটেজ, কার্তুজসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ হয়েছে। একটি সফল তদন্তের পরিসমাপ্তি কেবল টেকনিক্যাল একটি তুচ্ছ কারণে ব্যর্থ করে দেওয়া উচিত হবে না; বরং এ মামলায় অধিকতর তদন্ত করে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। পরবর্তী আইনগত জটিলতা এড়ানো সম্ভব হবে। আদালতের এই আদেশের পর পিবিআই বাবুলের শ্বশুরের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এটির বিরুদ্ধে শ্বশুর নারাজি আবেদন করলে আগামী ৬ মার্চ শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

সূত্র: প্রথম আলো