বহুল আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায় হাইকোর্টে বহাল থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। তিনি এই রায়কে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে বলেছেন, আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট। তবে চাই, আইনি প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত যেন রায়টি কার্যকর করা হয়।
সোমবার (২ জুন) হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় সাবেক টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে মামলার আরও ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও বহাল রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আদালত রায়ে প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশও বহাল রাখেন।
যাবজ্জীবন বহাল থাকা আসামিরা হলেন- টেকনাফ থানার সাবেক এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, সাগর দেব, কক্সবাজারের বাহারছড়ার মারিশবুনিয়া গ্রামের মো. নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ ও মো. নিজাম উদ্দিন।
আসামিদের আপিল খারিজ করে সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান রায়ের মূল অংশ পাঠ করে শোনান।
রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শামীমা দিপ্তী, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জসিম সরকার এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার সুমাইয়া আজিজ ও লাবনী আক্তার। শুনানিকালে আদালতে উপস্থিত ছিলেন নিহত মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস এবং কয়েকজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী তার ওপর গুলি চালান। ঘটনার পাঁচ দিন পর, ৫ আগস্ট ২০২০ সালে নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস টেকনাফ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। পরে তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর র্যাব ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে। চার্জশিটে সিনহার মৃত্যুকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড এবং টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত এবং কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাগর দেবকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া কক্সবাজারের বাহারছড়ার মারিশবুনিয়া গ্রামের মো. নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ ও মো. নিজাম উদ্দিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি সাত আসামি খালাস পান। পরে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা আপিল করেন।