আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ফেরানো এবং ব্যাংক ও এসএমই খাতকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে চলমান সংস্কার কাজ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোর কাঠামোগত দুর্বলতা কাটিয়ে তোলার পাশাপাশি গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে সংস্কার কার্যক্রমে গতি আনা হয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) রাজধানীর পুরান পল্টনে ‘এসএমই ফাউন্ডেশন-ইআরএফ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন রয়েছে। দুর্বল ব্যাংকগুলো নিয়ে কাজ চলছে। গ্রাহকদের ডিপোজিটের টাকা ফেরত দেওয়ার নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে হবে।
এসএমই খাতে অর্থায়নের জটিলতা তুলে ধরে তিনি বলেন, উদ্যোক্তাদের ঋণ পেতে এখনও অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। অথচ তাদের ঋণ পরিশোধের হার অনেক ভালো। ব্যাংকগুলো এখানে সহযোগিতা করতে আগ্রহী নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, এসএমই খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে হাতুড়ি-বাটালের দিন উঠে গেছে। উদ্যোক্তাদেরও এই বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও নীতিনির্ধারকদের এই খাতে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এসএমই প্রকল্পে নারীদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে উপদেষ্টা বলেন, নারীরা শুধু দক্ষই নয়, তারা অনেক সময় বেটার ম্যানেজও করে। তাই নারীদের আরও বেশি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন শুধু বক্তৃতায় নয়, বাস্তব কাজের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে।
এসএমই উদ্যোক্তাদের সঠিক তথ্য সংরক্ষণে একটি সমন্বিত ও ডিজিটাল ডেটাবেজ গঠনের ওপর জোর দেন ড. সালেহউদ্দিন। তিনি বলেন, হার্ডকপিতে থাকলে হবে না। সবকিছুই ডিজিটালাইজড করতে হবে। সব ক্ষেত্রেই এখন প্রায়োরিটি ডিজিটাল সিস্টেম হওয়া উচিত।
বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামোর অসমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে উপদেষ্টা বলেন, এখন ব্যাংকের স্ট্রাকচারে ঝামেলা চলছে। তারপরও ৬০-৬২ হাজার কোটি টাকা আমরা এনার্জি খাতে দিয়ে দিচ্ছি। সেখানে এসএমই যেন কোনো বিষয়ই না। এটা পরিবর্তন করতে হবে।
সরকারি অর্থের যথাযথ ব্যবহার এবং কর ব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা রাখতে হবে। নেগেটিভ রিপোর্ট আমাদের বেকায়দায় ফেলে দেয়। এনবিআরের ক্ষেত্রেও অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। অর্থের অপচয় রোধ করতেই হবে।
রেমিটেন্স প্রবাহকে ইতিবাচক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণ করতে হবে।
এ বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল থেকে মোট ২১ জন রিপোর্টারকে পুরস্কার দিচ্ছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)। নারীর ক্ষমতায়নে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের গুরুত্ব নিয়ে প্রতিবেদন করে ‘এসএমই ফাউন্ডেশন–ইআরএফ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ পেয়েছেন ঢাকা পোস্টের উপপ্রধান প্রতিবেদক শফিকুল ইসলাম।