ইসি পুনর্গঠনে সার্চ কমিটির পক্ষে আওয়ামী লীগ

ফানাম নিউজ
  ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:০৯
আপডেট  : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩:৫২

ভুঁইফোড় সংগঠনের কোনো অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নেতারা যাবেন না। কেউ গেলে তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। এসব সংগঠনের অনুষ্ঠানও আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে করতে দেওয়া হবে না। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রচলিত রীতি অর্থাৎ সার্চ কমিটির পক্ষে থাকবে আওয়ামী লীগ। এটিকে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া বলে মনে করে দলটি। গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা থেকে এ সিদ্ধান্ত আসে। সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়

এ ছাড়া ২৮ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উদযাপন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় বলে সভা সূত্রে জানা গেছে।

সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, প্রতিমাসে দলের বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকদের নিয়ে অন্তত একটি সভা করা আওয়ামী লীগের রীতি। করোনার কারণে কিছুদিন তা নিয়মিত হয়নি। সভার বিষয়ে তারা বলেন, সভার শুরুতেই ভুঁইফোড় সংগঠন নিয়ে আলাপ হয়। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়Ñ ভুঁইফোড় সংগঠনের অনুষ্ঠানে দলের নেতারা যেতে পারবেন না। এসব সংগঠনকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠান করতেও দেওয়া হবে না।

সভায় বক্তারা বলেন, ‘লীগ’ ও ‘আওয়ামী’ শব্দ যোগ করে প্রতিনিয়ত সংগঠন গজিয়ে উঠছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তারা অফিস নিয়ে দলের নাম ভাঙিয়ে যাচ্ছে। এসব বন্ধ না করতে পারলে আওয়ামী লীগের ইমেজ নষ্ট হবে। সুতরাং এদের বিরুদ্ধে অভিযানের আওতায় আনতে হবে।

সম্প্রতি কিছু ভুঁইফোড় সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হলেও এরকম অন্যান্য সংগঠনের শীর্ষ ব্যক্তিদের দৌরাত্ম্য কমেনি। সভায় এমন আলোচনার পর নেতারা এদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার কথা বলেন।

সভায় বিশেষ গুরুত্ব পায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উদযাপনের বিষয়টি। ২৮ সেপ্টেম্বর তার জন্মদিন উদযাপনে কর্মসূচিও নির্ধারণ করা হয়। ওইদিন সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ হাসিনার কর্মময় জীবনের ওপর আলোচনা হবে। বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে দোয়া মাহফিল হবে। সারাদেশের সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। সারাদেশে আওয়ামী লীগ ও দলের সহযোগী সংগঠন পৃথকভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করবে।

বিএনপির তিন দিনব্যাপী বৈঠকের আলোচনায় নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বিষয়টি উঠে আসে। এ বিষয়ে গতকাল আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় কথা হয়। আলোচনায় সবাই নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রচলিত রীতি অর্থাৎ সার্চ কমিটির পক্ষে সায় দেন এবং এটিকে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া বলে অভিহিত করেন।

দলে একজন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, বিগত দিনে বিদ্রোহীদের শর্তসাপেক্ষে ক্ষমা করে দেওয়ায় আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারে বলে সভায় শঙ্কা প্রকাশ করেন কেউ কেউ। পরে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যেন দলের একক প্রার্থী থাকে সেভাবে চেষ্টা করতে হবে। যদি কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হয় তাহলে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। বিভিন্ন সময়ে যারা বিদ্রোহীদের মদদ দিয়েছে তাদের কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচন কমিশন হবে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া মেনে।

মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগের অনুষ্ঠান বন্ধ

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগ নামের একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছিল। সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় প্রবেশের আগে আওয়ামী লীগ নেতারা দেখেন এলাকা পোস্টার, ব্যানারে ছেয়ে গেছে। অনুষ্ঠানের জন্য বর্ণিল মঞ্চও প্রস্তুত। এ সময় পৌঁছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিনকে জিজ্ঞেস করেন, এখানে কী হচ্ছে। তিনি জানান, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের প্রোগ্রাম। এতে মির্জা আজম বলেন, এখানে এসব করতে দেওয়া হবে না। পরে এসে দলের দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমও আয়োজন বন্ধের নির্দেশ দেন। পরে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান দুর্জয়কে ডেকে বলেন, এখানে দলের অনুমতি ছাড়া কোনো প্রোগ্রাম করা যাবে না। দ্রুত এসব সরিয়ে নাও।

পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের ব্যাপারে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু লীগ আর আওয়ামী যখন যুক্ত হয় তখন এখানে আমাদের সংশ্লিষ্টতা এসে যায়। এখানে আমাদের ভাবমূর্তির বিষয়টা এসে যায়, কারণ এসব দোকান অনেকে খুলে থাকে চাঁদাবাজির জন্য। এগুলো আসলে চাঁদাবাজির প্রতিষ্ঠান। সবাই করে তা নয়, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, এরা চাঁদাবাজিনির্ভর। এরা দলের নাম ভাঙায়। কাজেই এসব সংগঠনের কোনো ধরনের আয়োজনে, বৈঠকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হোক যেটাই হোক, আমি আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের আহ্বান জানাব, আপনারা কোনো অবস্থাতেই এসব সংগঠনের সভায় উপস্থিত থাকবেন না।