অঝোরে কাঁদলেন ওসি প্রদীপ

ফানাম নিউজ
  ১৭ নভেম্বর ২০২১, ২২:২২

পুলিশের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামি বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার আদালতে অঝোরে কেঁদেছেন। মামলার চলমান বিচারকার্যের সপ্তম দফা সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালতের কাঠগড়া থেকে কারাগারে ফেরার প্রিজনভ্যানে ওঠা পর্যন্ত তাকে কান্না করতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। চোখ থেকে অতিরিক্ত পানি ঝরার কারণে তার চোখ দুটি লাল হয়ে যায় বলেও জানান তারা।

এ ব্যাপারে মামলার বিচারকার্যের শুরু থেকে সম্পৃক্ত এক আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, দুই কারণে সাবেক ওসি প্রদীপ কাঁদতে পারেন। প্রথমত, তিনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলায় শিগগির নিজ অপরাধের শাস্তি পেতে যাচ্ছেন। এমনটি হলে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তাকে হত্যার অপরাধে নিশ্চিতভাবে তাকে অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। সেই আশঙ্কায় তিনি কেঁদেছেন। দ্বিতীয়ত, রাগে-ক্ষোভেও তিনি কাঁদতে পারেন। তার দায়িত্বকালীন সময়ে তিনি প্রতাপশালী রাজার মতোই হুকুম দিয়েছেন। তিনি না চাইলে তার কক্ষে কেউ প্রবেশ করতে পারেননি। সামনে বসতে পারেননি। এখন সিনহা হত্যায় অভিযুক্ত হয়ে বিচারকার্য চলাকালে আদালতের কাঠগড়ায় কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়েই থাকতে হচ্ছে। আসামিপক্ষের আইনজীবীদের দীর্ঘ জেরার কারণে সাক্ষীর পাশাপাশি আসামিদেরও দাঁড়িয়েই থাকতে হচ্ছে। বিচারকার্যের সপ্তম দফা পর্যন্ত একইভাবে চলে এসেছে এমন পরিস্থিতি। এ কারণে হয়তো অতীতের ক্ষমতার বিষয় মাথায় এসে রাগে ক্ষোভে কাঁদেন তিনি।

এ আইনজীবীর ভাষ্য, ‘মামলার ৬৪ জন সাক্ষী ও সর্বশেষ এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন প্রদীপ। আইনের মানুষ হিসেবে হয়তো মামলার রায়ে কী হতে পারে, সেটিও তার জানা হয়ে গেছে। এ কারণে মামলার রায়ের দিন ঘনিয়ে আসায় প্রদীপের মনোবল ভেঙে পড়েছে।’

ওসি প্রদীপের কান্না প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, ভয় কিংবা অনুশোচনার কারণে এটা হতে পারে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, কান্নাকালীন হাতকড়া পরা ওসি প্রদীপের দুই পাশে ছিলেন কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুনীর উল গীয়াস ও পরিদর্শক হাফিজুর রহমান।

এর আগে ছয় দফা সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আদালতে আনা-নেওয়ার সময় এভাবে প্রকাশ্যে কখনো কাঁদেননি প্রদীপ। সপ্তম ধাপের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তিনি কেন কাঁদলেন, এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি ফরিদুল আলম বলেন, এ মামলার সপ্তম দফা সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আগামী ২৯ ও ৩০ নভেম্বর এবং ১ ডিসেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইলের আদালত। এদিন তদন্ত কর্মকর্তার মুলতবি জেরা চলবে।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর মেরিনড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি, রামুতে একটি) মামলা করে। ঘটনার পর গত ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন মেজর সিনহার বড়বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।

আলোচিত এ মামলায় গতবছরের ১৩ ডিসেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের তৎকালীন দায়িত্বরত সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম ওসি প্রদীপসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। গত ২৭ জুন আদালত ১৫ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলায় ৮৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৬৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

বুধবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি খাইরুল ইসলামকে টানা সাত ঘণ্টা জেরা করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। সকাল ১০টা থেকে আদালত মুলতবির আগ পর্যন্ত (বিকেল ৫টা) তাকে জেরা করা হয়।

সূত্র: জাগো নিউজ