বাংলাদেশ, চীন এবং পাকিস্তানের অভিন্ন স্বার্থের সম্ভাব্য মিল ভারতের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান। মঙ্গলবার ভারতের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) এক আলোচনায় অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন তিনি।
আলোচনায় তিনি সরাসরি কোনও দেশের নাম উল্লেখ না করে বলেছেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক সংকটকে বহিরাগত শক্তিগুলো তাদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে; যা ভারতের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
ভারতীয় এই প্রতিরক্ষা প্রধান বলেন, ‘‘বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি স্বার্থের সম্ভাব্য মিল রয়েছে। আর এটি ভারতের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।’’
অনুষ্ঠানে সম্প্রতি পাকিস্তানের ভূখণ্ডে চালানো ভারতীয় সামরিক বাহিনীর ‘অপারেশন সিন্দুর’ নিয়েও কথা বলেন অনিল চৌহান। অভিযান চলাকালীন পাকিস্তানকে চীন কতটা রাষ্ট্রীয় সহায়তা দিয়েছিল; তা নির্ধারণ করা কঠিন বলেও জানিয়েছেন তিনি। অনিল চৌহান বলেছেন, সংঘাতের সময় ভারতের উত্তর সীমান্তে কোনও অস্বাভাবিক তৎপরতা দেখা যায়নি।
অপারেশন সিন্দুরের বিষয়ে ভারতীয় এই জেনারেল বলেন, সম্ভবত এটি প্রথম কোনও ঘটনা যে, দুটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল।
তিনি বলেন, ভারত কখনই পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইলের কাছে মাথা নত করবে না। জেনারেল অনিল চৌহান বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র আবিষ্কারের পর বিশ্বে এখন পর্যন্ত শত শত সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুটি দেশের মাঝে প্রথম কোনও সংঘাতের ঘটনা হিসেবে অপারেশন সিন্দুর ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। বিশ্বে এই প্রথমবার দুটি পারমাণবিক রাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘‘অপারেশন সিন্দুর অনন্য এক অভিজ্ঞতা এবং তা সারা বিশ্বের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে।’’
জেনারেল চৌহান বলেন, ভবিষ্যতে প্রচলিত যুদ্ধ পরিচালনার পরিসর আরও সম্প্রসারিত হতে পারে; যেমন সাইবার ও ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক যুদ্ধক্ষেত্রে। ভারতের পারমাণবিক নীতিতে ‘প্রথমে ব্যবহার না করার’ দৃষ্টিভঙ্গি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি প্রচলিত যুদ্ধের পরিসর তৈরি করে।
তিনি বলেন, ভারতকে সব স্তরের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সেটা প্রচলিত কিংবা অপ্রচলিত হতে পারে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, অস্ত্র হচ্ছে প্রতিরোধের উপায়; যুদ্ধ চালানোর নয়। ভারত পারমাণবিক ভয়ভীতির কাছে মাথা নত করবে না।
ভারতীয় এই জেনারেল বলেন, কাশ্মিরের পেহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারত যে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল, তাতে পাকিস্তানের সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলো ধ্বংস হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আপনি এটাকে প্রতিশোধ কিংবা প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ বলতে পারেন। কিন্তু এর উদ্দেশ্য ছিল ভবিষ্যতের হামলা ঠেকানো। পাকিস্তানই পরে এই সংঘাতকে প্রচলিত যুদ্ধের স্তরে নিয়ে যায়।’’
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, টাইমস অব ইন্ডিয়া।