রায়ে স্পষ্ট, কোনো ক্ষমতাবান নেতা আইনের বাইরে নয় : জামায়াত

ফানাম নিউজ
  ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১৪

চব্বিশের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এ বিচার প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ-নিরপেক্ষ, প্রশ্নাতীতভাবে আন্তর্জাতিক মানের বলে মনে করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। রায়ের পর আজ বিকেলে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তাদের এ অবস্থান জানায় দলটি।

জামায়াত বলছে, রাষ্ট্র বা সরকারের কোনো প্রধান বা কর্তাব্যক্তি, রাজনৈতিক কোনো নেতা, তিনি যত বড় ক্ষমতাবানই হোন না কেন, তারা যে আইনের ঊর্ধ্বে নয় তা এই রায়ে প্রতিষ্ঠিত হলো। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর হয়ত ক্ষতিপূরণ সম্ভব না, তবে আজকের এই রায়ে কিছু স্বস্তি তাদের হৃদয়ে এসেছে। কারণ সুবিচার তারা দেখতে পেল।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিকেল সোয়া ৩টার দিকে পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার রায়ের ওপর প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজধানীর মগবাজারে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামী। সেখানে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি, আইনের শাসন এবং বিচারের ইতিহাসে একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন আজ। কারণ কোনো একজন সরকার প্রধানের সর্বোচ্চ সাজার রায় হলো আজ। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। এটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আপনারা দেখেছেন আজকে দীর্ঘ সময় ধরে যে বিচারকরা রায় পড়েছেন সেখানে ফুটে উঠেছে অপরাধীরা কী পরিমাণ নিষ্ঠুর ঘৃণ্য প্রতিহিংসামূলক অপরাধ করেছে। তাদের পত্রপত্রিকা অডিও-ভিডিও তাদের টেলিফোনিক কনভারসেশনের যে সমস্ত তথ্য হুবহু ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়েছে, রায়ের মধ্যে কোট- আনকোট সেগুলো পড়ে শোনানো হয়েছে।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা মনে করি এই বিচারের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। কারণ বিচার স্বচ্ছ হয়েছে, নিরপেক্ষ হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানের হয়েছে। এর আগে মানবতা বিরোধী অপরাধের নামে জামায়াতে ইসলামীর প্রিয় নেতৃবৃন্দের ব্যাপারে যে বিচার হয়েছে ট্রাইবুনালে সেই বিচার নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয় সারা দুনিয়াতে প্রশ্ন ওঠে, সেটি আন্তর্জাতিক মানের হয়নি। সে বিচারের বাদী সাজানো, এজাহার সাজানো, মামলা সাজানো, সাক্ষী সাজানো, বিচারক সাজানো, রায় সাজানো ছিল। আদালতের চত্বর থেকে সাক্ষীকে গুম করা হয় তখন।

তিনি আরও বলেন, যাদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে, আয়না ঘরে খুন-খারাবি করে ক্রসফায়ারে বিভিন্নভাবে শেষ করা হয়েছে, পিলখানা-শাপলা চত্বর, আরও বিচার প্রক্রিয়া তো সামনে আছে। এটা প্রথম রায় আমরা পেলাম সেজন্য আমরা মনে করি সবগুলোরই নিরপেক্ষ স্বচ্ছ বিচার হওয়া উচিত। আজকের রায়ের মধ্য দিয়ে অন্তত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো যারা পিতা হারিয়েছে, স্বামী হারিয়েছে, সন্তান হারিয়েছে তাদের ক্ষতি হয়ত কোনোদিন পূরণ হবে না। কিন্তু কিছুটা স্বস্তি তাদের হৃদয়ে এসেছে। একটা সুবিচার তারা দেখতে পেল। রাষ্ট্র বা সরকার বা তার কোনো প্রধান কর্তাব্যক্তি, রাজনৈতিক কোনো বড় নেতা, যতই ক্ষমতাবান হোক, তারা যে আইন এবং বিচারের ঊর্ধ্বে নয় এ রায়ের মধ্য দিয়ে আজকে সেটি প্রমাণিত হলো।

আমি মনে করি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের যারা জুডিশিয়ারিতে থাকবেন ম্যাজিস্ট্রেসিতে থাকবেন বিচারের এই বিরাট জিম্মাদারি সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে মানুষের জীবন মৃত্যুর ফয়সালার মতো দুনিয়ার বিচারের দায়িত্ব যারা গ্রহণ করবেন এই রায় থেকে এই বিচারকদের প্রসিকিউশনে যারা ছিলেন তাদের দৃঢ়তা সাহসিকতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। যেন আমাদের দেশে আর কখনো বিচারক হোক প্রশাসক হোক কেউ যেন ফ্যাসিবাদী না হয়ে ওঠেন, কর্তৃত্ববাদী না হয়ে ওঠেন, অত্যাচারী না হয়ে ওঠেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন— জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম, ড. এইচএম হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সেলিম উদ্দিন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়