শিরোনাম
একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। মানুষের সঙ্গে সুন্দর আচরণ ও উত্তম কথা বলা। অনেকেই এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় না। অথচ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুন্দর আচরণ ও উত্তম কথা বলার চমৎকার বিনিময়ের কথা ঘোষণা করেছেন। কোরআন- হাদিসে এ সম্পর্ক বিশেষ দিকনির্দেশনা এসেছে।
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিম উম্মাহকে পরস্পরের সঙ্গে সুন্দর আচরণ ও উত্তম ভাষায় কথা বলার উপদেশ দিয়েছেন। এটি ঈমানদারের বিশেষ আমলও বটে। এ আমলের সর্বোত্তম বিনিময় সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনায় এসেছে-
১. হজরত মিকদাম রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন জানতে চান, ‘কী আমল করলে জান্নাতে যাওয়া যাবে?’ উত্তরে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তুমি উত্তম কথা বলো এবং মানুষকে খাবার দান করো।' (সিলসিলাহ সহিহাহ)
২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে, অন্যথায় চুপ থাকে।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ)
উত্তম কথা কেন বলবেন?
ইসলামের প্রতিটি উপদেশে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। উত্তম কথা এবং ভদ্র আচরণও এর ব্যতিক্রম নয়। বরং সুন্দর ও নরম নরম কথায় মানুষ দ্বীনের দিকে প্রভাবিত হয়। এ কারণেই কোরআনুল কারিমের একাধিক স্থানে ছোট্ট আমলটি করার নির্দেশ এসেছে এভাবে-
وَ قُوۡلُوۡا لِلنَّاسِ حُسۡنًا
‘আর তোমরা মানুষের সঙ্গে উত্তমভাবে কথা বলবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৮৩)
আয়াতে উত্তম কথা বলতে এমন কথাকে বোঝানো হয়েছে, যা সৌন্দর্যমণ্ডিত। এর অর্থ এই যে, যখন মানুষের সঙ্গে কথা বলবে; তখন নম্রভাবে হাসিমুখে ও খোলামনে কথা বলা। নরম ও সুন্দর সুন্দর কথা বলা। এ কথায় মানুষের মনে ভালো প্রভাব পড়ে।
পক্ষান্তরে সত্য কথার ওপর অটল-অবিচল থাকতে হবে। সত্য কথা বলাও সুন্দর কথার অন্তর্ভূক্ত। কারও মনোরঞ্জনের জন্য কিংবা দ্বীনের ব্যাপারে শৈথিল্য দেখাতে সত্য গোপন করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা যখন মুসা ও হারূন আলাইহিস সালামকে নবুয়ত দান করে ফেরাউনের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তখনও উত্তম কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-
فَقُوۡلَا لَهٗ قَوۡلًا لَّیِّنًا لَّعَلَّهٗ یَتَذَکَّرُ اَوۡ یَخۡشٰی
তোমরা তার (ফেরাউনের) সঙ্গে নম্র কথা বলবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে, অথবা ভয় করবে।' (সুরা ত্বহা: আয়াত ৪৪)
বর্তমানে যারা একে-অন্যের সঙ্গে কথা বলে, তারা যেমন মুসা আলাইহিস সালামের চেয়ে উত্তম নয়; তেমনি যার সঙ্গে কথা বলে, সে-ও ফেরাউনের চেয়ে বেশি মন্দ বা পাপিষ্ঠও নয়। তাই সুন্দর কথা ও উত্তম আচরণের বিকল্প নেই।
সুন্দর কথার পুরস্কারই আলাদা!
ঈমানের একান্ত দাবিও এটি যে, সবার সঙ্গে সুন্দরভাবে কথা বলা। সুন্দর কথার দ্বারা জান্নাত পাওয়া ছাড়াও আরও উপদেশমূলক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে পাকে এসেছে-
১. নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা সৎ কাজের সামান্যতম কিছুকে খাটো করে দেখ না। যদিও তা হয় তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাত করা।’ (মুসলিম)
২. হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জান্নাতের মধ্যে একটি বালাখানা রয়েছে, যার ভেতর থেকে বাইরের এবং বাইরে থেকে ভেতরের দৃশ্য দেখা যায়। এক বেদুঈন বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই বালাখানা কার জন্য? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
> যে ব্যক্তি মানুষের সঙ্গে ভালো (সুন্দর ভাষায়) কথা বলে;
> যে ব্যক্তি অনাহারীকে খাবার দেয়;
> যে ব্যক্তি রোজা রাখে; এবং
> যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করে যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)
৩. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর এক বর্ণনায় এসেছে যে, মানুষের সঙ্গে সদালাপের (সুন্দর কথার) অর্থ হচ্ছে- সৎ কাজের আদেশ দেওয়া ও অসৎ কাজের নিষেধ করা।’ (আত-তাফসীরুস সহীহা)
সুতরাং হাদিসের আলোকে সুন্দর কথা বলার প্রথম অনুপম শিক্ষা হলো- যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তিকে গালাগাল দেয়; তারপরও ওই ব্যক্তির সঙ্গে উত্তম ভাষায় সুন্দর কথা বলা। তবেই মহান আল্লাহ তাআলা ওই বান্দাকে দান করবেন চিরস্থায়ী জান্নাত।
‘সুন্দর কথার’ আমল মানুষকে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়। হাদিসে এ আমলের ঘোষণা-ই যে কাউকে কথা-বার্তায় শালিন হতে শেখাবে। এমনকি কারও গালাগালের বিপরীতেও উত্তম কথায় জবাব দেওয়ার প্রতি অনুপ্রাণিত করবে। যারাই হাদিসের ওপর আমল করবে তারাই হবে জান্নাতি। তারাই পাবেন জান্নাতের নেয়ামত বালাখানা ও ধৈর্যের প্রতিদান।
মনে রাখতে হবে
জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে সুন্দর কথা বলার বিকল্প আমল নেই। অপরকে উত্তম কথা বলতে উৎসাহ দেওয়া। সবাই নিজের মতো করে উত্তম কথার প্রচলন ঘটানোর চেষ্টা করা। তবেই নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের সফল বাস্তবায়ন হবে। আর জান্নাতে উত্তম বালাখানা পেয়ে ধন্য হবেন মুমিন।
আল্লাহ তাআলা সব মানুষকে পরস্পরের সঙ্গে সুন্দর আচরণ ও ভালো কথা বলার তাওফিক দান করুন। সুন্দর কথা বলার মাধ্যমে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের পাশাপাশি পরকালে মুমিন মুসলমানকে জান্নাতের বালাখানা ও নেয়ামতে ধন্য করুন। আমিন।