আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রভাব

ফানাম নিউজ
  ১৪ জুলাই ২০২১, ১৩:৩৮
আপডেট  : ২৫ আগস্ট ২০২১, ১১:০৫

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও ন্যাটো সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা লক্ষ্য করছি দেশটি জুড়ে আফগান সরকারি বাহিনী ও নিরীহ বেসামরিক জনগণের ওপর তালেবানদের আক্রমণ বেড়েই চলেছে। মার্কিন ও ন্যাটো সৈন্য যাতে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত না হয়, সে ব্যাপারে অবশ্য তালেবান বাহিনী সজাগ রয়েছে, যাতে পশ্চিমা শক্তিগুলো তাদের সামরিক স্থাপনাগুলো সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব করার কোনো অজুহাত খুঁজে না পায়। তালেবানরা জানে যে, ২০২১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান ছেড়ে যাবে। তাই তারা এখন সময়ের অপেক্ষায় আছে; তৈরি করছে ক্ষমতায় ফিরে যাওয়ার ভিত্তি। এজন্য তালেবানরা তাদের অস্ত্রের মজুত বাড়াচ্ছে এবং গ্রামগঞ্জে তাদের প্রভাব বিস্তার করছে।

আজ শান্তি চুক্তি সই : আফগানিস্তানের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা

১৯৭৫ সালের এপ্রিল মাসে তদানীন্তন দক্ষিণ ভিয়েতনামে যা ঘটেছিল, ঠিক তারই পুনরাবৃত্তি ঘটছে আজকের আফগানিস্তানে। সে সময় দক্ষিণ ভিয়েতনাম থেকে দ্রুত মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ফলে মার্কিন মিত্ররা অসহায় হয়ে পড়ে। এবারও মার্কিন প্রশাসনকে আফগানিস্তানে যারা সহযোগিতা করেছিল এবং যারা ২০০১ সাল থেকে আফগানিস্তানের জাতীয় সরকারে অংশ নিয়েছেন, তারা এখন প্রমাদ গুনছেন। তালেবানরা আবার ক্ষমতায় আসার আগেই তারা অনেকেই আফগানিস্তান ত্যাগের পথ খুঁজছেন। বাইডেন প্রশাসনের আফগানিস্তান ত্যাগের সিদ্ধান্তটি আবারও এই কথাই প্রমাণ করে যে, ‘আমেরিকানরা আসলেই অবিশ্বস্ত মিত্র।’ আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই বছরের শেষ নাগাদ কাবুল, কান্দাহার এবং অন্যান্য বড় শহর তালেবানদের দখলে চলে যেতে পারে। আফগানিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়া ও সারা বিশ্বে এর কী প্রভাব ফেলবে তা এখন পর্যালোচনার বিষয়।

১৯৭৯-২০০১; এই দুই দশকে আফগানিস্তান মৃত্যু ও ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই দেখেনি। প্রথমত, ১৯৭৯-১৯৮৯ পর্যন্ত সিআইএর অর্থায়নে আফগান মুজাহিদ বাহিনীর সোভিয়েবিরোধী লড়াই চলে। এরপর ১৯৮৯ সালে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বিশেষত ISI-এর পৃষ্ঠপোষকতায় তালেবান বাহিনীর উত্থান ঘটে। ২০০১ সালে মার্কিন ও ন্যাটো-সমর্থিত তালেবানবিরোধী জোটের হাতে পরাজয়ের পূর্ব পর্যন্ত চলে তালেবানদের তথাকথিত ‘ইসলামি আমিরাত’, যার অতি উগ্র রূপ বিশ্ববাসী দেখেছে।

২০০১ সালে কাবুলে একটি জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার পর আফগানিস্তানের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। জনগণ প্রথমবারের মতো একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান রচনা করে; প্রতিষ্ঠা করে বহুদলীয় গণতন্ত্র। জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়। আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিরা তাদের নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে পরবর্তী দায়িত্বপ্রাপ্তদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। নির্বাচনিপ্রক্রিয়া যে ত্রুটিমুক্ত ছিল তা নয়, কিন্তু কিছু ভুলভ্রান্তি সত্ত্বেও গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে এটা ছিল বড় বিজয়।
 

সাক্ষাৎকার-মতামত এর পাঠক প্রিয়