নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে দুদকের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ পেছাল

ফানাম নিউজ
  ২৮ জুন ২০২২, ১৬:০০

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা করায় সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা পাল্টা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ১১ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত।

মঙ্গলবার (২৮ জুন) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান এ আদেশ দেন।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নাজমুল হুদার মামলা বাতিলের আবেদনের শুনানি মুলতবি থাকায় আজ মামলার বাদী দুদকের পরিচালক ইকবাল হোসেনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়নি।

প্রসঙ্গত, গত ৭ জুন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা পাল্টা মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মামলাটি বিচারিক আদালতে ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সেদিন আদালতে দুদকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশিদ আলম খান, রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক এবং আবেদনের পক্ষে নাজমুল হুদা নিজেই শুনানি করেন।

বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে মামলা করার পর নাজমুল হুদা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ২০১৭ সালে তার কাছে সোয়া ৩ কোটি টাকা ঘুষ দাবি করেছিলেন বিচারপতি এস কে সিনহা।

তিনি বলেছিলেন, ‘সে সময় সিনহা আমাকে বলেছিলেন, টাকা না দিলে আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা সবকটি মামলার রায় আমার বিরুদ্ধে যাবে। ঘটনার তারিখ ছিল ২০ জুলাই। ওই দিন দুপুরে প্রধান বিচারপতি তার খাস কামরায় ডেকে ঘুষ দাবি করেন।’

সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘খবরের অন্তরালে’র জন্য মীর জাহের হোসেন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে এক মামলায় নাজমুল হুদার ৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। জরুরি অবস্থার সময় দেওয়া ওই মামলার রায়ে হুদার স্ত্রী সিগমা হুদারও ৩ বছর কারাদণ্ড হয়েছিল।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে নাজমুল হুদা ও সিগমা হুদা আপিল করলে ২০১১ সালের ২০ মার্চ হাইকোর্ট তাদের খালাস দেয়। কিন্তু দুদকের আপিলে আপিল বিভাগ ওই রায় বাতিল করে পুনঃশুনানির নির্দেশ দেয়। তখন আপিল বিভাগে ছিলেন বিচারপতি সিনহা। মামলার পুনঃশুনানি শেষে হাই কোর্টের আরেকটি বেঞ্চ নাজমুল হুদাকে ৪ বছরের কারাদণ্ড দেয়।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের তোপের মুখে থাকা প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ২০১৭ সালের নভেম্বরে পদত্যাগ করেন। তার ১ বছরের মাথায় ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর শাহবাগ থানায় তার বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির একটি মামলা করেন নাজমুল হুদা। পরে মামলাটি যায় দুদকের হাতে।

ওই মামলায় হুদা অভিযোগ করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে হওয়া সেই মামলা উচ্চ আদালতে‌ ‌‌‌‌‌‌‌‌করার পরও প্ররোচিত হয়ে মামলাটির রায় পরিবর্তন করা হয়েছিল।

‘মামলাটি ডিসমিস করতে দুই কোটি টাকা ও অন্য একটি ব্যাংক গ্যারান্টির আড়াই কোটি টাকার অর্ধেক ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা উৎকোচ চান এসকে সিনহা।’

পরে হুদার মামলাটি তদন্তের জন্য দুদকে আসে। দেড় বছর তদন্ত করে এসকে সিনহার বিরুদ্ধে নাজমুল হুদার মামলাটি ’মিথ্যা অভিযোগে’ করা হয়েছে বলে প্রমাণ হয়। তখন ‘মিথ্যা তথ্য দেওয়ার’ অভিযোগে উল্টো ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিরুদ্ধেই মামলা করা হয়।

২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। তদন্ত শেষে গত বছরের অক্টোবরে হুদার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদক পরিচালক বেনজীর আহম্মেদ।

চলতি বছরের ৬ এপ্রিল মামলার অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ হওয়ায় উল্টো নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান।

সূত্র: আরটিভি

আইন বিচার - অপরাধ এর পাঠক প্রিয়